চরফ্যাসন প্রতিনিধি ॥ চরফ্যাসনে ধর্ষনের চেষ্টাকারী লম্পটের পুরুষাঙ্গ কেটে নিজের সম্ভ্রম বাঁচানো গৃহবধুকে জব্দ করতে তার বাড়িতে হামলা ও মামলা করা হয়েছে। হুমকী দেয়া হচ্ছে ধর্ষণচেষ্টার মামলা তুলে নিতে। পাশাপাশি ধর্ষণচেষ্টার মামলার বাদিনী ও ভিক্টিমসহ ওই মামলা সব সাক্ষীদের বিরুদ্ধে চরফ্যাসন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুরুষাঙ্গহারা ধর্ষণের চেষ্টাকারী নঈমের বাবা আজম আলী সর্দার বাদি হয়ে গত বৃহষ্পতিবার(১ অক্টোবর) মামলাটি দায়ের করেন। নঈমের স্বজনদের হুমকী, বাড়িতে হামলা ও মামলা দায়েরে আতংকিত গৃহবধূ গ্রামছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।ঘটনার ৪দিন পরও সুশীল সমাজ কিংবা কোন নারীবাদি সংগঠন নিগৃহীত ও নির্যাতিত এই গৃহবধূর পাশে দাড়াননি। নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন তার পরিবার।
গত রোববার(২৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের ভাসানচর গ্রামের আবাসন প্রকল্পের নিজের বসতঘরে ঘুমন্ত গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টা করেন একই গ্রামের আজম আলী সর্দারের ছেলে ও ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক লম্পট নঈম। নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে গৃহবধূ হাতের কাছে থাকা ব্লেডদিয়ে ধর্ষণের চেষ্টাকারী নঈমের পুরুষাঙ্গ কেটে দেন। আহত নঈম বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ঘটনার পরদিন সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ভিক্টিম গৃহবধূ নঈমকে একমাত্র আসামী করে শশীভূষণ থানায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মামলা দায়েরের পর গৃহবধূ এবং তার পরিবারকে জব্দ করতে হুমকী ধামকী শুরু করেন ধর্ষণের চেষ্টাকারী নঈমের স্বজনরা। যার ধারাবাহিকতায় বৃহষ্পতিবার(১ অক্টোবর) নঈমের বাবা আজম আলী সর্দার বাদি হয়ে চরফ্যাসন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার ছেলেকে হত্যাচেষ্টার মামলা দাখিল করেছেন। মামলাটি শুনানীর পর আদেশের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানিয়েছেন। ওই মামলায় ধর্ষণচেষ্টা মামলার বাদিনীসহ মামলার সব সাক্ষীদের আসামী করা হয়েছে বলে মামলার নথীসূত্রে জানাগেছে। আদালতে মামলা দায়েরের পর শুক্রবার (২ অক্টোবর) দিবাগত রাতে নঈমের বাবা আজম আলী সর্দার, ভাই ইলিয়াস ও শিপন ও স্ত্রী পারুলসহ ৮/১০ জনের দুর্বৃত্তদল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ধর্ষণচেষ্টার মামলার বাদিনীর বাড়িতে হামলা করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। হামলাকারীরা ধর্ষণচেষ্টার মামলাটি তুলে নিতে বাদিনী ও তার স্বজনদের হুমকী দেন। মামলা তুলে নেয়া না হলে আরো মামলা ও হামলার জন্য প্রস্তত থাকতে সতর্ক করে যায়। এই হামলার সময় গৃহবধূ দুইসন্তানসহ পালিয়ে প্রাণ বাঁচান। এই হামলার সময় তার স্বামী মাছ ধরার জন্য নদীতে ট্রলারে ছিলেন। এই হামলার ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে বসতঘর ও গ্রামছেড়ে পালিয়ে দক্ষিণ আইচা থানায় তার বাবা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ওই গৃহবধূ।
গতকাল শনিবার আতংকিত ওই গৃহবধূ এই প্রতিনিধিকে জানান, নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতেই তিনি ধর্ষণচেষ্টাকারী নঈমের পুরুসাঙ্গ কর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। মামলা দিয়েছেন। এখন হুমকীর মুখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জীবন বাঁচানোর হুমকী তো আছেন,পাশাপাশি মিথ্যা মামলারও আসামী হয়েছেন। কিন্ত এসবের মধ্যে কেউ তার পাশে আসেননি। সাহসও দেননি। দু’টি সন্তান নিয়ে ফেরারীর মতো দিন কাটাচ্ছি। খেয়ে না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছি। কিন্ত আমার কি অপরাধ ছিল। কেউ খবর পর্যন্ত রাখেননি।
অভিযুক্ত নঈমের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানাযায়নি। তবে তার বাবা আজম আলী সরদার জানান, হুমকি ধামকী ও হামলার বিষয়টি সঠিক নয়। তবে আমার ছেলে নঈমকে হত্যার চেষ্টা অভিযোগে আমি বাদী হয়ে চরফ্যাসন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেছি। শশীভূষণ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, ধর্ষণচেষ্টার মামলার বাদিনীকে হুমকী-ধামকী কিংবা তার বসতবাড়িতে হামলার বিষয় পুলিশকে জানানো হয়নি। এমন কিছু হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply